ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাক্তন ছাত্রদের গরীব অসহায় শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ
এম এ সালাম রুবেল, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে হিমালয়ের শীতল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অসহায়, হতদরিদ্র,ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশাকে যেন ভেদ করতে পারছেনা সুর্য্যের কিরণ। গত দুইদিন থেকে দেখা মিলেনি রোদ্রের ঝলমলের উষ্ণতা।
এইসব শীতার্ত অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষকে একটু উষ্ণতা দিতে পাশে দাড়িয়েছে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাক্তন ছাত্রদের মঞ্চ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছিন্নমুল হত- দরিদ্র মানুষের মাঝে অসংখ্য কম্বল বিতরণ করে সংগঠনটি। শুক্রবার সদর উপজেলার কচুবাড়ী কাজী ফার্মসপাড়া,শাহপাড়া,কেশুরবাড়ী গ্রামে শীতার্ত অসহায় দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন সংগঠনটি। এতে নিদারুণ ভোগান্তিতে এক পশলা সুখের অনুভূতিই যেন বয়ে গেছে এসব দুঃখী ও অসহায় মানুষদের মনে।
কচুবাড়ী গ্রামের অন্ধ ব্যক্তি আনন্ধারু(৯০) উস্কখুস্ক চুল। শীতের প্রকোপে ফেটে গেছে শরীরের চামড়া। মলিন জামা আর তালি দেওয়া চাদর পরে আছেন। তাতে শীত কতটা নিবারণ হচ্ছে তিনিই জানেন। অন্ধ তাই কাউকে চিনতে পারছে না ঘুম থেকে উঠে এসে বলেন কে এসেছে যখন শুনলেন কম্বল নিয়ে এসেছে কয়েকজন ছেলে খবরটি শুনে একটা মুচকি হাসি দেন এ সময় বলেন তোমাদের সাথে যারা জড়িত আছে তাদেরকে আল্লাহ অনেক ভালো রাখুক।
আরাজি গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র তবিজউদ্দীন (৮৫) বিকাল বেলা রাস্তার পাশে বসে আছে। ঠান্ডায় কিছুটা কাহিল হয়ে গেছে যখন প্রতীক্ষার প্রহর শেষে কম্বল হাতে পেলেন, তখন মলিন মুখের চওড়া হাসিটা ছিল দেখার মতো। নিজের উপচেপড়া খুশি প্রকাশ করে তিনি বলেন,গত কয়দিন যে শীত পড়েছে, তাতে বাঁচা মুসিবত হয়ে যাছে। কম্বল পায়া মেলা খুশি হইছু। অন্তত রাতের বেলায় শান্তিত ঘুমাবা পারিমো ।
আয়েশা বেগম তার পরিবারের সদস্য বেশ কয়েকজন। কিন্তু সেই অনুযায়ী নেই শীত ঠেকানোর ব্যবস্থা। প্রতিবছর শীতে নাজেহাল অবস্থা হয় তার পরিবারের। প্রায় রাতেই ঘুমাতে খুব কষ্ট করতে হয়। এলাকায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাক্তন ছাত্রদের শীতবস্ত্র বিতরণের খবর শুনেই ছুটে এসেছেন বুকভরা আশা নিয়ে। কম্বল পেয়ে নিজের খুশি ব্যক্ত করে বলেন, ‘হামার বাড়িত মেলা লোক।
রাইতের বেলা ঘুমাবার সমস্যা হয়। গ্রামত তো শীত খুব। কম্বলটা কামে দিবে। পাশে থাকা ৮০ বছর বয়সী বিধবা বৃদ্ধা নতুন কম্বল যখন হাতে পেলেন চোখে তখন ঝাপসা পানি। কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলেন স্থানীয় মেম্বারদের বলার পরেও তারা কোন সহযোগিতা করেনি। আল্লাহ আপনাদের ভালো করুক।
অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন, ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর প্রাক্তন ছাত্র, সিনিয়র সাংবাদিক ও বাংলা টিভির ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ (মামুন), স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থিংক পজিটিভ এর সাধারণ সম্পাদক আসিফ কামাল, তরুন সাংবাদিক মাসুদ রানা, আসাদুজ্জামান বাবু প্রমুখ। ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাক্তন ছাত্র মঞ্চের অন্যতম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, অসহায়, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত।
আমরা বিগত কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষদের জন্য কাজ করে আসতেছি। আমাদের সংগঠনের সদস্যদের সহযোগিতায় আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। যদি আমরা কোন সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পাই তাহকে আরো বেশি এ সব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারবো।