লামা প্রতিনিধি।।
লামা উপজেলার একটি ইউনিয়ন সরই। উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৩০ কি:মিটার। ইউনিয়নটিতে ভূমি মালিকানা নিয়ে চলছে ব্যাপক বিরোধ। এসব বিরোধকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে খুন, হত্যা, অপহরণ, লুটতরাজ, অগ্নি সংযোগ, জবর দখল, মারদাঙ্গা, মিথ্যা মামলা, নারী ধর্ষন-নির্যাতন ইত্যাদি অপরাধ সংগঠিত হয়ে আসছে। দুর্বৃত্তদের দাপড়ে সেখানে নিরিহ মানুষ জিম্মি দশায় রয়েছে। অত্যাচারের শিকার হয়েও অনেক মানুষের বিচারের বাণী নিরবে-নিবৃতে কাঁদে। অত্যাচারিত মানুষের কান্নার রোল যেন থামচেনা সরই ইউনিয়নে। একের পর এক ঘটছে জুলুম নির্যাতনের ঘটনা।
এর সর্বশেষ ঘটনা, ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে সরই ইউপির পুলংগ্রামে একদল দুর্বৃত্ত কৃষক আবদুল জাব্বার এর মৎস্য খামারে হামলা চালিয়ে দু’টি সেমি পাকা অবকাঠামো ভেঙ্গে মাটির সাথে গুড়িয়ে দেয়। এঘটনার কয়েকদিন আগে-২১/১০-২০১৯ তারিখে মৎস্য খামারটির বাঁধ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় সন্ত্রাসীরা কৃষকের ৭-৮ বছরের পালিত মাছ নিয়ে যায়। এতে কৃষকের ৫ লাখ টাকার মাছ ও ১ লাখ টাকা বাঁধে, মোট ৬ লাখ টাকা ক্ষতি সাধিত হয় বলে জানায়। মানবাধিকার কর্মি, লামা কোর্টের একজন আইনজীবি, স্থানীয় ক’জন রিপোর্টারসহ সাংবাদিকরা ৮ ডিসেম্বর দুপুরে সরেজমিন গেলে এই নির্মম দৃশ্যের বাস্তব চিত্র দেখতে পায়।
সরজমিন দেখা যায়, লেকের দু’পাড়ে ইটের তৈরি দুটি ঘর সম্পুর্ন বিধ্বস্থ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছে, যেন কোন আকাশ হামলায় এরুপ ধ্বংসা লীলা ঘটেছিলো(!)। এসময় ৭০ বছর বয়সী কৃষক আবদুল জব্বার অঝোর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সে জানায়, তিনি সেখানে ১৫ একর জমির মালিক। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অনেক অর্থ ব্যায় করে ওই ভূমিতে বনায়ন সৃজন করেছেন। সেই জমির মাঝখানে একটি লেক সৃষ্টি করে মৎস্য চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার একটি ছেলে প্রতিবন্ধি (পঙ্গু)অনার্সে পড়ে। এই হামলা কারা করেছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাতকানিয়া রুপকানিয়া বোয়ালিয়াপাড়ার বাসিন্দা সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক ও তার ছেলে ডালিম এবং আনোয়ার হোসেনসহ একদল সন্ত্রাসীরা এসব করেছে। সে জানায়, ভূমি সন্ত্রাসী এই দলটি দীর্ঘনি ধরে জমিটি তাদের দাবী করে নানান ধরনের হয়রানী-হামলা মামলা করে চলছে।
কৃষক আবদুল জব্বার জানান এই নিয়ে আদালতে করা প্রতিটি মামলায় তার পক্ষে রায় এসেছে। এর পরেও এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত থেকে উক্ত ভূমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করান কৃষক আবদুল জব্বার। “নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে তারা কিছুদিন আগে লেকের বাঁধ কেটে দেয়” বলে এ কৃষক দাবী করেন। বাঁধ কেটে দেয়ার ব্যাপারে লামা কোর্টে একটি সি.আর মামলা ২৯৮/১৯ করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পিআইবিকে তদন্তর নির্দেশ দেন।
কিন্তু এই মামলাটি করার পরই আসামীরা আরো বেপরোয়া ক্ষেপে উঠেন, কৃষক আবদুল জব্বার এর প্রতি। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে দু’টি পাকা স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে লুটতরাজ-ভাঙ্গছুর, চুরি ও এক নারীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগসহ মামলা হয়েছে লামা কোর্টে।
বিষয়টি নিয়ে লামা থানা অফিসার ইনচার্জ আপ্পেহ্লা রাজু নাহা সাংবাদিকদের জানান, “ঘর ভাঙ্গার বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি”।
প্রসঙ্গত: সরই ইউনিয়নে কোয়ান্টম, ম্যারেডিয়ান চিপ্স, বাংলাদেশ রাবার, গাজী রাবার, মোস্তফা গ্রুপ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ভূমির মালিকানা রয়েছে। সেখানে পাহাড়ী ঢালুতে বিস্তুর বাগান উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলার অনেক বাসিন্দা সেখানে ভূমির মালিক। পূনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা অন্যান্য ইউনিয়নের তূলনায় সরই ইউপিতে কম। এর ফলে সেখানে ভূমির চাহিদা ও মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে যে কোন অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট প্রদানে সংশ্লিষ্টদের পক্ষপাত আচরণের ফলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নির্যাতিত জনগোষ্ঠি।
এদিকে এসব বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণ করায় সাংবাদিকদেরকে মামলা হামলার হুমকি দিয়ে চলছে, ভূমি দস্যুদের পক্ষাবলম্বনকারীরা। ১১ ডিসেম্বর এই প্রতিনিধিকে, মোবাইল ফোনে হুমকী প্রদান করেন সরই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান পুত্র দস্তগীর মানিক। দস্তগীর মানিক তাকে এই সংবাদদাতাকে মামলা-হামলার হুমকিসহ লামা উপজেলার আরো কয়েজন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম ধরে গালি-গালাজ করেন। দস্তগীর মানিক কর্তৃক সাংবাদিকদেরকে হুমকীর মোবাইল অডিওটি এখন স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। লামা প্রেসক্লাব, লামা সাংবাদিক ফোরামসহ লামা উপজেলার অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেয়া প্রয়োজন।