মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী কর্নফুলী নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন অপসারণ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী রাশিয়ান নাবিক ইউরি রেডকিনের স্মৃতি সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে লালদিঘীর দক্ষিণ পশ্চিম কোণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাটভকে এই স্মৃতিসৌধ দেখাতে নিয়ে যান। রাষ্ট্রদূত নব নির্মিত এই স্মৃতি সৌধ দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং মেয়রকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
মেয়র বলেন, ইউ রি রেডকিনের সমাধি স্তম্ভটি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি অধিকৃত এলাকা। সাধারণ মানুষকে রেডকিনের সমাধি স্তম্ভ পরিদর্শন করতে নানা আইনি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ার এই নাবিক আমাদেরকে সহযোগিতা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তার এই আত্মত্যাগ জাতির কাছে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। লালদিঘীর পাড়ে রেডকিনের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ফলে দুটি দেশের চিরকালীন বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আরো সমুন্নত হয়েছে।
পরবর্তীতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্র দূত আলেকজান্ডার আই ইগনাটভ রেডকিনের স্মৃতিসৌধে পুষ্প স্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় চসিক প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মো সামসুদ্দোহা, চট্টগ্রামে নিযুক্ত রাশিয়ার কনসাল জেনারেল স্থপতি আশিক ইমরান ও তার স্ত্রী , চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে কর্ণেল সোহেল আহমদ, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থানে ডুবে থাকা অসংখ্য নৌযান উদ্ধার ও পাকিস্তানিদের পুঁতে রাখা মাইন অপসারণে তৎকালীন সোভিয়েত নৌবাহিনীর একটি টিম চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ মাইন উদ্ধার করতে গিয়ে ১৯৭৩ সালের ১৩ জুলাই সোভিয়েত উদ্ধারকারী নৌবাহিনীর নাবিক ‘ইউ রি রেডকিন’ মাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারান। পরবর্তীতে তার লাশ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ রাশিয়া সরকারের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিদেশি নাবিককে বন্দরের মোহনার কাছে কর্ণফুলী নদীতীরেই সমাহিত করা হয়। তার সমাধি এলাকায় নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ। যা রেডকিনের সমাধি হিসেবেই পরিচিত। বর্তমানে এই স্থানটি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির অধিকৃত জায়গা হিসেবে রয়েছে।