মোঃ পারভেজ কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ উপকূলীয় এলাকার বিস্তৃর্ন মাঠ জুড়ে এখন পাকা ধানের ঘ্রাণ।গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর উপকূলের রেকর্ড পরিমান জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন কৃষকেরা।আর এ বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় ওইসব কৃষকদের চোখে মুখে লেগে আছে সোনালী স্বপ্ন পূরনের ছাপ।কয়’দিন পরেই কলাপাড়া উপজেলার প্রত্যাক গ্রামের কৃষকরা ক্ষেতের স্বপ্নের সোনালী ধান কাটা শুরু করবে।
অধিকাংশ কৃষক পরিবারে নবান্ন উৎসবও চলছে।তবে বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কায়।কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলার আয়তন ৪৯২১০২ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে পৌরসভা ২টি, ইউনিয়ন ১২ টি, গ্রাম ২৪৭টি। এখানে মোট জমির পরিমান ৪৯২১০ হেক্টর। যার মধ্যে কৃষি জমি ৪০৯৪০ হেক্টর। এবছর উফসী জাতের ২৪১০০ হেক্টার ও স্থানীয় জাতের ১০৪০০ হেক্টার জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে।তবে ঘূর্নিঝড় বুলবুল’র তান্ডবে কিছু কিছু ধানের ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত গ্রাম-গায়ের কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে।সকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়তেই দেখা গেল দিগন্ত জোড়া সোনালি ঢেউ। মাঠ জুড়ে সোনালি ধান। আমন ধানের গন্ধে ভরে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। হালকা বাতাসে পাকা ধানের শীষ দোলা খাচ্ছে। স্বপ্নের সোনালী ধান কাটতে কাস্তে হাতে ব্যস্ত কৃষকরা।
ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।ক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কাঁটি ও গাছের ডালের উপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে।
স্বপ্নে বিভোর উপকূলের ওইসব কৃষকরা।একধিক কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জমি চাষ থেকে শুরু করে রোপন ও ক্ষেতের নিয়মিত পরিচর্যা করায় ফসলও ভালো হয়েছে। একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন, ঘুর্নিঝড় বুলবুল’র তান্ডবে আমন ধানের ক্ষেত তেমন কোন ক্ষতি সাধন হয়নি।
সব মিলিয়ে এ বছর ক্ষেতে ভাল ফলন হয়েছে। তবে ধানের দাম নিয়ে ওইসব কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কৃষক মো.রুহুল আমিন বলেন, কেবল মাত্র ক্ষেতে ধানের থোর বের হয়েছিল। ঠিক সেই সময় ঘূর্নিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষেতের কিছু কিছু অংশের ধান নুয়ে পড়েছে।
এর ফলে ধানে চিটা হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে বলে জানান ওই কৃষক। লালুয়া ইউনিয়নের ছোনখলা গ্রামের কৃষক স্বপন হাওলাদার বলেন, এ বছর তিনি ১৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ পরিমান জমিতে ধান ফলাতে ট্রাক্টরে দিতে হয়েছে ১৮ হাজার টাকা, বীজ বপনে শ্রমিকদের মজুরী ১৮ হাজার টাকা এবং সার ঔষধে ১০ হাজার টাকা সহ তার মোট ৪৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তবে ঘুর্নিঝড় বুলবুল’র আঘাতে তার ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।বাজারে ধানের দাম ভাল পেলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কৃষক নাসির হাওলাদার বলেন, ঘূর্নিঝড় বুলবুল’র কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার পারও ক্ষেতে ভাল ধান হয়েছে।
বাজারে ভাল মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারলে সবকিছু পুষিয়ে যাবে। দুই এক দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু করবে বলে তিনি জানিয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ঘূর্নিঝড় বুলবুল যেভাবে আঘাত হেনেছে তাতে অনেকটা ক্ষতির আশংকা ছিল। ধান ক্ষেতের দৈহিক অবস্থান গত কারনে সে ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি। যে ধান গুলো পরিপক্ক ছিল সে গুলো পরে গেছে।
এ উপজেলায় তেমন কোন ক্ষতি সাধন হয়নি। যা হয়েছে তার তালিকা করে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।