ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হিসেবে এই ঋতুবৈচিত্র্যময়তা। বাংলা পোৗষ এবং মাঘ এই দুই মাসকে বলে শীতকাল। শরতে শিউলি ফুলের প্রলোভনে হেমন্তে নবান্নের হাত ধরে আসে শীত।
শীতের আগমন নিষ্প্রাণ, ছন্দ-গন্ধহীন! হেমন্তই শীতের পূর্বাভাস দিয়ে দেয়। গ্রাম বাংলার প্রবাদে- ‘এক মাঘে শীত যায় না’, ‘মাঘের শীত বাঘের গায়ে, শীতের জ্বালায় বাঘ কাঁপে’, ‘কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ’। কিন্তু আমাদের দেশে এই শীতকাল কেন আসে কিভাবে আসে।
পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই ঘোরাকে বলা হয় পৃথিবীর বার্ষিক গতি। পৃথিবীর এই বার্ষিক গতির জন্য ঋতুর পরিবর্তন হয়। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় একপাশে একটু হেলে ঘোরে। পৃথিবীর এই হেলানো অবস্থাই ঋতু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। এভাবে কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে চলে যায়, কখনো যায় উত্তর গোলার্ধ।
যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়ে তখন সে অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো এবং তাপ পায়। সেই অংশে বেশি গরম পড়ে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল থাকে। একটা অংশ সূর্যের কাছে থাকা মানে তার উল্টো দিকের অংশটা থাকবে সূর্য থেকে দূরে। আর দূরে থাকলে কী হবে? সেই অংশটা কম তাপ এবং আলো পাবে। তখন সেই অংশে থাকবে শীতকাল।
জলবায়ুর উষ্ণতার দিক থেকে হেমন্ত এবং বসন্তের মধ্যবর্তী ঋতুকে বলা হয় শীতকাল। তোমরা জানো কি, পৃথিবীকে ঠিক মধ্য বরাবর দু’ভাগ করা হয়েছে একটি রেখা দিয়ে। যার নাম বিষুব রেখা। এই বিষুব রেখার একপাশে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ অন্যপাশে উত্তর গোলার্ধ।
বাংলাদেশে যখন গ্রীষ্মকাল থাকে তখন অস্ট্রেলিয়ায় শীতকাল। এবার বুঝো সেটা কেন হয়? কারণ অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ এবং বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের দেশ। বছরের যে তিন মাস দিবস থাকে সবচেয়ে ছোট সেটাই হবে শীতকাল। সে হিসেবে জুন, জুলাই ও আগস্ট দক্ষিণ গোলার্ধের দেশে শীতকাল এবং নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি হল উত্তর গোলোর্ধের দেশে শীতকাল। আর বাংলাদেশে তখনই শীতের সমারোহ পড়ে!