মহিলা কবি কামিনী রায় তাঁর বিখ্যাত “চাহিবেনা ফিরে “কবিতায় বলেন,
“পথে দেখে ঘৃনা ভরে, কত কেহ গেল সরে?
কেহ বা কাছে আসি বরসি গঞ্জনা রাসি ।পতিত মানব তরে নাহি কী এ সংসারে?
একটি ব্যথিত প্রাণ দুটিযে অশ্রু ধর।”
১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাঙ্গালি জাতীয় জীবনে যে দুর্দশার ছায়া নেমে ছিল তা আজ দৃশ্যমান ।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ শাসন আমলে এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় পথে-প্রান্তে বন্য পশুদের মত মৃত্যুবরণ করেছে ।পেটের জ্বালায় দুগ্ধপোষ্য শিশুকে গর্ভ ধারনী মা দুধের পিপাসা মেটাতে না পেয়ে অন্যের বাড়িতে ফেলে রেখে গেছেন । ইতিহাস যার নাম দিয়েছে “মন্বন্তর ”
বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র তাঁর বিখ্যাত জমিদার দর্পণ নাটকে,”লিখেছেন ক্ষুধার্ত চাষী অন্ন কষ্ট সহ্য করতে না পেয়ে আধা পাকা ধান ক্ষেতকে আঁকরে ধরে সপরিবারে মৃত্যু বরণ করেছে ।” ধান কাটা পর্যন্ত বেঁচে থাকা সম্ভব হয়নি চাষীর।
চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন তাঁর বিখ্যাত চিত্র কর্মে মধ্যেও নিদারুণ অভাব দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরেছেন ।
১৯১০ সালে আল বেনিয়ার স্কোপিয়তে জন্মগ্রহণ করে মাদারতেরেসা ভারতীয় উপ-মহাদেশে দার্জিলিং এ লরেটো সিস্টারস খ্রিষ্টানমিশনারীতে তিন বছর নান হওয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ।ফলে তিনি ১৯৫১ সালে কলকাতার কালীঘাটে অসহায় মানুষের জন্য নিরমলহৃদয় প্রতিষ্ঠা করেন বৃদ্ধ মানুষের জন্য নবজীবন,অনাথ -পথ শিশুদের জন্য শিশুভবন,কুষ্ঠরোগীদের জন্য প্রেমনিবাস প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ।১৯৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হলে ভারতে আস্রায় নেন প্রায় এক কোটি মানুষ ।ভারতে আস্রায় নেয়া অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্যে ও সেবা করেছেন তিনি ।১৯৯১সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে ফলে প্রায় এক লক্ষ মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণী মৃত্যু বরণ করে ।৬১বছর বয়সী মাদারতেরেসা বাংলাদেশে ছুটে আসেন ঘূর্ণিঝড়ে
বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ।অসামান্য মানুষের জন্য দরদ থাকায় তিনি মানবসেবী হিসেবে বিশ্বের মাঝে পরিচিতি লাভ করেন ।
আসলেই বর্তমানে মাদারতেরেসার মত মানুষের অভাব ।
সকলেরই মাঝে স্বার্থপরতা স্বভাব ।তাই তো আধুনিক যুগে এসে ও রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের আহাযারী এবং করুণ আর্তনাদ ।
আজ মহত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু,নেতাজী সুভাষচন্দ্র,নেলসন ম্যান্ডেলা,আব্রাহাম লিংকন ,মাওলানা আঃ হামিদ খান ভাসানী মত মজলুম জননেতা যদি থাকত পৃথিবীতে তাহলে রাস্তায় পরে ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষের জন্য অনশনে বসত।
তাদের পরলোক গমনে আজ আর পরে থাকা মানুষের জন্য কেউ অনশনে বসেনা।মানব বন্ধন করেনা।
মানব বন্ধন হয় রাজকোষাগারের সম্পদ লুঠতরাজের ।ফলে উৎসাহিত হয় গ্রামের সিচকা চোররা।সাহস সঞ্চার করে গরু চুরি করতে।ঘুষ দিলেই ছাড়াপায় এই রাজকোষাগার চোরারা।
তাই আমাদের উচিত MDG লক্ষ্য অর্জনের ১৭টির প্রধান লক্ষ্য ক্ষুধা মুক্ত
পৃথিবী গঠনে ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ।তাদের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তার আন্দোলন গড়ে তোলা ।
আসবে না ফিরে সেই মজলুম জননেতা বৃন্দ ।
কে আছ হও আগুয়ান নজরুলের মত গাহিব সাম্যের গান ।